প্রতি বছর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া প্রতিটি করদাতার কর্তব্য। অনেকেই এই প্রক্রিয়াটি জটিল মনে করেন, তবে আসলে এটি ততটা কঠিন নয়।এই ব্লগ পোস্টে, আমরা আপনাকে আয়কর রিটার্ন জমা দেবার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেবো।
প্রতি বছর ১ লা জুলাই থেকেই কোনো জরিমানা ছাড়া চলতি করবর্ষের নিয়মিত আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। জরিমানা ছাড়া নিয়মিত আয়কর রিটার্ন জমার শেষ দিন ৩০ নভেম্বর। করদাতাগণ এ সময়ের পরও আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত জরিমানা দিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। করদাতা যে কর অঞ্চলের যে সার্কেলের আওতায় (অধিখেত্রাধীন) আছেন, সেখানকার উপকর কমিশনারের অনুমতি স্বাপেক্ষে এ সময়ের পরও আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
বর্তমানে দেশব্যাপী ৩১ (একত্রিশ) টি কর অঞ্চলের ৬৪৯ (ছয়শত ঊনপঞ্চাশ) টি সার্কেলে করদাতারা করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। সাধারণতঃ প্রতি অর্থবছরের ১ লা জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এই ০৫ (পাঁচ) মাস জরিমানা ছাড়া বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যায়। বর্তমানে দেশে প্রায় ৯০ (নব্বই) লাখ ইটিআইএনধারী আছেন। তাদের মধ্যে প্রতি বছর ৩০ (ত্রিশ) লাখের মতো লোক নিজেদের আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত আয়কর রিটার্নে উল্লেখ পূর্বক রিটার্ন জমা দেন।
আয়কর রিটার্ন কীভাবে জমা দিবেনঃ
আয়কর অফিস থেকে আয়কর রিটার্ন ফরম নিয়ে পূরণ করে জমা দিলেই কাজ শেষ। তবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার জন্য নির্দিষ্ট ফরমের সঙ্গে বেশ কিছু কাগজপত্রও যুক্ত করতে হয়। এই কাগজপত্রগুলো মূলতঃ করদাতার আয়ের-ব্যয়ের উৎস প্রমাণ হিসেবে প্রয়োজন হয়। করদাতা’কে রিটার্ন দাখিলের সময় ভিন্ন ভিন্ন খাত অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কাগজপত্র প্রদর্শন করতে হতে পারে। যেমন;
বেতন খাত :
করদাতা যদি সরকারি বা বেসরকারি বেতনভুক্ত কর্মকর্তা/কর্মচারী হন, তাহলে তাঁকে যেসব নথিপত্র সংযুক্ত করতে হবে, তা হলো বেতন বিবরণী, ব্যাংক হিসাব থাকলে কিংবা ব্যাংক সুদ খাতে আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী বা ব্যাংক সার্টিফিকেট, বিনিয়োগ ভাতা দাবি থাকলে তার স্বপক্ষে প্রমাণাদি। যেমন; জীবন বীমার পলিসি থাকলে প্রিমিয়াম পরিশোধের প্রমাণ।
নিরাপত্তা জামানতের সুদ খাত :
বন্ড বা ডিবেঞ্চার যে বছরে কেনা হয় সে বন্ড বা ডিবেঞ্চারের ফটোকপি, সুদ আয় থাকলে সুদ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নপত্র, প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ নিয়ে বন্ড বা ডিবেঞ্চার কেনা হয়ে থাকলে ঋণের সুদের সমর্থনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সার্টিফিকেট বা ব্যাংক বিবরণী বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রত্যয়নপত্র রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
গৃহ-সম্পত্তি খাত :
বাড়ি ভাড়ার সমর্থনে ভাড়ার চুক্তিনামা বা ভাড়ার রসিদের কপি, মাসভিত্তিক বাড়িভাড়া প্রাপ্তির বিবরণ এবং প্রাপ্ত বাড়ি ভাড়া জমা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাব বিবরণী, পৌর কর, সিটি করপোরেশন কর, ভূমি রাজস্ব প্রদানের সমর্থনে রসিদের কপি, ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে বাড়ি কেনা বা নির্মাণ করা হয়ে থাকলে, ঋণের সুদের সমর্থনে ব্যাংক বিবরণী ও সার্টিফিকেট ও গৃহ-সম্পত্তি বীমাকৃত হলে বীমা প্রিমিয়ামের রসিদের কপি রিটার্নের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
ব্যবসা বা অন্যান্য পেশা খাত :
ব্যবসা বা অন্যান্য পেশার আয়-ব্যয়ের বিবরণী ও স্থিতিপত্র আয়কর রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
অংশীদারি ফার্মের আয় :
অংশীদারি ফার্মের ব্যবসা থাকলে ফার্মের আয়-ব্যয়ের বিবরণী ও স্থিতিপত্র জমা দিতে হবে। অন্যান্য উৎসের আয়ের খাত নগদ লভ্যাংশ খাতে আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী, ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্টের কপি বা সার্টিফিকেট, সঞ্চয়পত্র হতে সুদ আয় থাকলে সঞ্চয়পত্র নগদায়নের সময় বা সুদ প্রাপ্তির সময় নেওয়া সার্টিফিকেটের কপি, ব্যাংক সুদ আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী কিংবা সার্টিফিকেট ও অন্য যে কোনো আয়ের উৎসের জন্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র।
যাদের আয়কর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক
দেশে সব মিলিয়ে ৪৩ (তেতাল্লিশ) টি সরকারি-বেসরকারি সেবা নিতে আগের মতো রিটার্ন জমার রসিদ লাগবে। গত বছর পর্যন্ত ৩৮ (আটত্রিশ) টি সেবা পেতে রিটার্ন জমার রসিদ লাগত। নতুন আয়কর আইনে ০৫ (পাঁচ) টি সেবা যোগ করা হয়েছে। সেবাগুলো হচ্ছে নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়ি ভাড়া বা লিজ গ্রহণ (বাড়ির মালিক); নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক সেবা বা পণ্য গ্রহণ (সরবরাহকারী); ট্রাস্ট, তহবিল, ফাউন্ডেশন, এনজিও, ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী সংস্থা, সোসাইটি ও সমবায় সমিতির ব্যাংক হিসাব খোলা ও চালু রাখা; স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও কার্টিজ পেপারে ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে নিবন্ধন, লাইসেন্স বা তালিকাভুক্ত করা বা বহাল রাখা; রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে গঠিত এমন কর্তৃপক্ষ বা অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় অনুমোদনের জন্য ভবন নকশার আবেদন দাখিল।
আগে থেকেই আয়কর রিটার্ন জমার রসিদ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণের জন্য আবেদন করলে; পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলে; গাড়ি থাকলে, ক্রেডিট কার্ড নিলে; সরকার থেকে ১৬ হাজার টাকার বেশি বেতন পেলে; কোনো কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হলে; ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য হলে; কারো সন্তান বা পোষ্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করলে; অস্ত্রের লাইসেন্স নিলে; উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হলে।
সতর্কতাঃ
———–
প্রদত্ত সকল তথ্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা দেশের বর্তমান ও প্রচলিত আইন বা নিয়ম অনুযায়ী। সংশ্লিষ্ট বিভাগ, সংস্থা বা সরকার তা যে কোন সময় পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন এবং বাতিল করতে করতে পারে।
© All Rights Reserved Dr.Gazi & Associates 2000-2024