বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (BSTI) হলো বাংলাদেশের জাতীয় মান এবং পরীক্ষাকেন্দ্র। এটি সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠান, যা পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, মান প্রণয়ন, পণ্য পরীক্ষার সনদ প্রদান এবং ওজন ও পরিমাপের নির্ধারিত মান প্রয়োগের দায়িত্ব পালন করে। BSTI এর মূল লক্ষ্য হলো ভোক্তাদের মানসম্মত পণ্য নিশ্চিত করা এবং দেশের শিল্প ও ব্যবসা খাতে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা।
BSTI এর কার্যক্রম
BSTI মূলতঃ নিম্নলিখিত কাজগুলো সম্পন্ন করে থাকে;
১। মান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন: BSTI পণ্য, সেবা, ও প্রক্রিয়াগুলোর জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মান প্রণয়ন করে এবং এসব মান বাস্তবায়নে কাজ করে। মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করার জন্য BSTI নীতিমালা ও গাইডলাইন প্রণয়ন করে।
২। পণ্যের পরীক্ষাগার সেবা: BSTI বিভিন্ন পণ্যের গুণগত মান নির্ধারণের জন্য পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে। খাদ্যপণ্য, ইলেকট্রনিক্স, বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালসহ বিভিন্ন পণ্য BSTI এর ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে, পণ্যগুলো সরকারি এবং আন্তর্জাতিক মান পূরণ করছে কিনা।
৩। সনদ প্রদান: পণ্যের মান যাচাই করার পর, BSTI সংশ্লিষ্ট কোম্পানি’কে সনদ প্রদান করে। এই সনদটি সেই কোম্পানির পণ্যের মানসম্পন্নতার প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।
৪। ওজন ও পরিমাপের নিয়ন্ত্রণ: BSTI সঠিক ওজন ও পরিমাপের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। ওজন ও পরিমাপের যন্ত্রপাতির যথাযথতা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং তাদের বৈধতার সনদ প্রদান করা হয়।
৫। মোবাইল কোর্ট এবং বাজার তদারকি: BSTI নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিং করে, যেখানে নকল বা মানহীন পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করে। এতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং অপরাধীদের জরিমানা বা শাস্তি প্রদান করা হয়।
BSTI এর গুরুত্ব
১। ভোক্তার সুরক্ষা: BSTI এর কার্যক্রম ভোক্তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। মানহীন এবং নিম্নমানের পণ্য যাতে বাজারে প্রবেশ করতে না পারে, তা BSTI এর পরীক্ষার মাধ্যমে রোধ করা হয়।
২। রপ্তানিতে সুবিধা: আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মানের গুরুত্ব অপরিসীম। BSTI এর সনদ প্রাপ্ত পণ্য রপ্তানিতে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে, কারণ এসব পণ্য আন্তর্জাতিক মানের সনদপত্র পায়।
৩। শিল্প খাতের উন্নয়ন: BSTI বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের পণ্য উন্নয়নে সহায়তা করে এবং তাদের আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করতে উৎসাহিত করে। এতে করে দেশের শিল্পখাত আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে ওঠে।
৪। বাজারের নির্ভরতা বৃদ্ধি: BSTI এর সনদযুক্ত পণ্য ভোক্তাদের মধ্যে নির্ভরশীলতা সৃষ্টি করে। ভোক্তারা নিশ্চিত থাকেন যে তারা মানসম্পন্ন পণ্য কিনছেন।
BSTI এর সেবা প্রাপ্তির পদ্ধতি
BSTI এর সেবা পেতে কোম্পানিগুলোকে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। আবেদন পর্যালোচনা করে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং মান নির্ধারণের পরীক্ষা শেষে প্রয়োজনীয় সনদ প্রদান করা হয়।
চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
BSTI অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও, এখনও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। নকল পণ্যের বাজারে বিস্তার রোধ করা, মান নির্ধারণ প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুততর করা এবং জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধিতে আরও কাজ করা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে BSTI আরও আধুনিক এবং প্রযুক্তিনির্ভর সেবার দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যাতে দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে মান পরীক্ষার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়।
ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার
নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী সকল সেবা এক জায়গা থেকে প্রদানের লক্ষ্যে ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০০৮ তারিখ থেকে বিএসটিআইতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করা হয়েছে। এ সেন্টার হতে প্রদত্ত সেবা সমূহ;ে
ক) বিভিন্ন লাইসেন্স গ্রহণের জন্য আবেদন ফরম সরবরাহ, আবদেন গ্রহণ, আবেদন ফি গ্রহণ।
খ) আবেদনকৃত পণ্যের নমুনা গ্রহণ ও সংশ্লিষ্ট ল্যাবে প্রদান।
গ) প্রাপ্ত আবেদন পত্র সমূহ সংশ্লিষ্ট পরিচালকের নিকট প্র্রেরণ।
ঘ) লাইসেন্স ফি/ লাইসেন্স নবায়ন ফি গ্রহণ এবং লাইসেন্স প্রদান।
ঙ) লাইসেন্স গ্রহণের পরামর্শ প্রদান।
চ) জনসাধারণ’কে সিটিজেন চার্টার মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে পন্য পরীক্ষণ প্রতিবেদন প্রদান নিশ্চিত করা।
ছ) অকৃতকার্য পণ্যের ক্ষেত্রে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অকৃতকার্যতার কারণসহ পরীক্ষণ ফলাফল গ্রাহক’কে অবহিত / সরবরাহ নিশ্চিতকরণ।
জ) এসএমই শিল্প এবং মহিলা উদ্যোক্তাদের দ্রুত সেবা প্রদান।
ঝ) পণ্যের গুণগত মানের লাইসেন্স দ্রুত প্রদান।
ট) মান বিক্রয়।
ঠ) স্বেচ্ছায় লাইসেন্স গ্রহনেচ্ছু উদ্যোক্তাদের জন্য (V.P.C.S ) বিশেষ কাউন্টার স্থাপন এবং সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণ।
উপসংহার
BSTI ভোক্তা ও উৎপাদনকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, যা দেশের আভ্যন্তরীণ বাজার এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মানসম্পন্ন পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করে। এটি দেশের শিল্পখাতের মান উন্নয়ন এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। BSTI এর কার্যক্রম আরো সম্প্রসারণ এবং আধুনিকীকরণ করলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।