বাংলাদেশে ভ্যাট (মূসক) রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা ব্যবসায়ীদের জন্য কী প্রয়োজন এবং কী তথ্য প্রয়োজন তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা প্রতি মাসের শেষে। সাধারণত রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ হলো পরবর্তী ইংরেজী মাসের ১৫ তারিখ এর মধ্যে। যেমন, যদি জানুয়ারি মাসের রিটার্ন দাখিল করতে হয়, তাহলে সেটা ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যে দাখিল করতে হবে।
তবে, বিশেষ ক্ষেত্রে বা সরকারি নির্দেশনার ভিত্তিতে এই সময়সীমা পরিবর্তিত হতে পারে। নিয়মিত আপডেটের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসরণ করা উচিত।
ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য হলো:
- ব্যবসা বা সেবা সংক্রান্ত আদায়ের তথ্য
- প্রাপ্তি ও ব্যয়ের তথ্য
- স্বত্বের তথ্য (যদি প্রযোজ্য হয়)
- BIN নম্বর ও প্রত্যয়নপত্রের তথ্য
- অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য, যেমন: ব্যবসা অথবা সেবার ধরন ইত্যাদি।
এছাড়াও, অনেক ক্ষেত্রে একটি সঠিক বুক কিপিং পদ্ধতি অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা সঠিক ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন।
সুতরাং, আপনার ব্যবসা বা সেবার জন্য ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করতে সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশে অনলাইনে ভ্যাট জমা করার পদ্ধতি কি?
বাংলাদেশে অনলাইনে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) জমা করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হয়:
১. নিবন্ধন
- আপনাকে প্রথমে অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন করতে হবে। এর জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
- ভ্যাট অনলাইন সিস্টেমে প্রবেশ: বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) ভ্যাট অনলাইন সিস্টেম ওয়েবসাইটে যান।
- রেজিস্ট্রেশন: যদি আপনার কাছে আগে থেকেই ব্যবহারকারী আইডি না থাকে, তাহলে সাইটে নতুন একাউন্ট তৈরি করুন। একাউন্ট তৈরির জন্য আপনার ব্যবসার নিবন্ধন নম্বর (BIN) প্রয়োজন হবে।
২. লগইন
রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, আপনার একাউন্ট ব্যবহার করে লগইন করুন।
৩. VAT-9.1 ফর্ম পূরণ
- লগইন করার পর, ড্যাশবোর্ড থেকে ‘VAT-9.1’ ফর্ম নির্বাচন করুন।
- প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করুন, যেমন মাসিক বিক্রয় ও ক্রয়ের তথ্য।
- ফর্ম পূরণ করার পর, নিশ্চিত করুন সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করা হয়েছে।
৪. জমা দেওয়া
- ফর্ম জমা দিতে ‘Submit’ বাটনে ক্লিক করুন।
- আপনার জমা দেওয়া ফর্মটি সফলভাবে গৃহীত হলে একটি রশিদ বা প্রাপ্তি পাবেন।
৫. পরিশোধ
- অনলাইন ব্যাংকিং বা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আপনার নির্ধারিত ভ্যাট পরিমাণ পরিশোধ করুন।
- ভ্যাট পরিশোধের জন্য ব্যাংকিং অপশন নির্বাচন করে, প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে পেমেন্ট সম্পন্ন করুন।
৬. প্রমাণপত্র সংরক্ষণ
- আপনার জমা দেওয়া ফর্ম এবং পেমেন্ট রশিদ সংরক্ষণ করুন, কারণ ভবিষ্যতে এই তথ্য দরকার হতে পারে।
এটি ছিল সংক্ষেপে অনলাইনে ভ্যাট জমা করার প্রক্রিয়া। কোনো জটিলতা বা প্রশ্ন থাকলে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হেল্পলাইন বা স্থানীয় ভ্যাট অফিসের সাথে যোগাযোগ করুন।
সঠিক সময়ে ভ্যাট রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা কি?
বাংলাদেশে সঠিক সময়ে ভ্যাট রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা আরোপিত হতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) এই জরিমানা আরোপ করে এবং এটি ভ্যাট আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়। জরিমানা সম্পর্কে প্রধান পয়েন্টগুলি হলো:
জরিমানার ধরণ ও পরিমাণ
রিটার্ন দাখিলে বিলম্ব
- সঠিক সময়ে রিটার্ন জমা না দিলে প্রতিদিনের জন্য ১০০০ টাকা করে জরিমানা আরোপিত হবে।
- বিলম্বের কারণে প্রতি মাসে মোট ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
অনাদায়ী ভ্যাটের উপর সুদ
- অনাদায়ী ভ্যাটের উপরও সুদ ধার্য করা হয়, যা বিলম্বিত পরিমাণের উপর প্রতিদিন ২% হারে গণনা করা হয়।
- জরিমানা আরোপের উদাহরণ
যদি একজন ব্যবসায়ী নির্ধারিত সময়ের ১০ দিন পরে রিটার্ন জমা দেন, তাহলে তাকে ১০,০০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে (১০ দিন × ১০০০ টাকা)।
- এছাড়াও, যদি এই সময়ের মধ্যে ভ্যাট পরিশোধ না করা থাকে, তবে অনাদায়ী ভ্যাটের উপর সুদ ধার্য হবে।
জরিমানা পরিহার করার উপায়
- যথাসময়ে রিটার্ন জমা দিন।
- রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়সীমা মিস করার আশঙ্কা থাকলে পূর্বেই NBR বা স্থানীয় ভ্যাট অফিসের সাথে যোগাযোগ করে পরিস্থিতি জানিয়ে রাখুন।
- প্রয়োজন হলে একজন পেশাদার ভ্যাট কনসালটেন্টের সাহায্য নিন।
প্রতিকার
- জরিমানা আরোপের ক্ষেত্রে যদি কোনো ভুল বা অনিচ্ছাকৃত কারণ থাকে, তাহলে NBR এর কাছে আপিল করা যেতে পারে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি ও কারণ উল্লেখ করতে হবে।
ভ্যাট আইন এবং NBR এর নির্দেশাবলী পরিবর্তন হতে পারে, তাই সর্বদা সর্বশেষ আপডেট এবং নির্দেশনা সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
© All Rights Reserved Dr.Gazi & Associates 2000-2024